কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। এর অর্থ হলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। ইলেক্ট্রনিক আরো অনেক যন্ত্র আছে। কিন্তু কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য যা কম্পিউটারকে অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে আলাদা করেছে। উল্লেখযোগ্য দশটি বৈশিষ্ট্য হলো -
১)দ্রুতগতি (High Speed) ২) নির্ভুলতা (Correctness)
৩) সূক্ষতা (Accuracy) ৪) বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability)
৫) ক্লান্তিহীনতা (Diligence) ৬) স্মৃতিশক্তি (Memory)
৭) স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) ৮) যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত (Logical Decision)
৯) বহুমুখিতা (Versatility) ১০) অসীম জীবনীশক্তি (Endless Life)
উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর কারনেই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়নের পেছনে কম্পিউটারের ভ’মিকাকে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হয়। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও বর্তমানে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। নি¤েœ কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ্যগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১) দ্রুতগতি (High Speed)
বৈদ্যুতিক বাল্বের সুইচ অন করা মাত্রই বাল্ব জ্বলে ওঠে। কারন বিদ্যুতের গতি অন্যান্য যেকোন বস্তুর গতির চেয়ে অনেক অনেক বেশি। বিদ্যুতের গতিতে আমাদের পৃথিবীকে পরিভ্রমন করলে এক সেকেন্ড সারে সাতবার পরিভ্রমন করা সম্ভব। কম্পিউটারের গতিও হচ্ছে বিদ্যুতের গতি। কম্পিউটার কাজ করে বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে আর তাই আধুনিক কম্পিউটার ২ (দুই) কোটি যোগ করতে সময় ব্যবহার করে মাত্র ১ সেকেন্ড। দ্রুতগতি কম্পিউটারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি। কম্পিউটার একটি নির্দেশ সম্পন্ন করতে ১ ন্যানোসেকেন্ড সময় ব্যবহার করে। ১ সেকেন্ডর ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ১ ন্যানোসেকেন্ড। তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য সেকেন্ডের ভগ্নাংশের একটি টেবিল নিচে দেয়া হলো -
১ মিলি (গরষর) সেকেন্ডে = ১/১০০০ সেকেন্ড
১ মাইক্রো (গরপৎড়) সেকেন্ড = ১/১০০০০০০ সেকেন্ড
১ ন্যানো (ঘধহড়) সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০ সেকেন্ড
১ পিকো (চরপড়) সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০০০০ সেকেন্ড
১ফেম্টো (ঋধসঃড়) সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০০০০০০০ সেকেন্ড
এ্যাটো (অঃঃড়) সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০০০০০০০০০০ সেকেন্ড
দ্রুতগতির কারনে কম্পিউটার ১ (এক) ঘন্টায় যে পরিমান হিসাব-নিকাশের কাজ করতে পারবে একজন মানুষ তার ১০০ বছরের কর্মময় জীবনেও তার সমপরিমান কাজ করতে পারবে না।
২) নির্ভুলতা (Correctness)
কম্পিউটার একটি মেশিন। মানুষের দেয়া সূত্র ও যুক্তির মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে। মানুষ তার নিজের আবিস্কার করা সূত্র ব্যবহার করতে যেয়ে ভুল করতে পারে। কিন্তু কম্পিউটার কখনও ভুল করে না। কম্পিউটারের নির্ভুলতা শতকরা ১০০ ভাগ।
৩) সূক্ষ্মতা (Accuracy)
কম্পিউটারের স্মৃতিশক্তি আছে। তাই অনেক ঘর পর্যন্ত নির্ভুলভাবে গানিতিক ক্রিয়াকলাপ করতে পারে। এই কারনে কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা অনেক বেশি ধরে নেয়া যায়। দ্রুতগতি ও সূক্ষ্মতা এই দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের কারনে পর্যবেক্ষনমূলক গবেষনার কাজে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। যেমন পারমানবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরনে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষন করা হয়।
৪) বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability)
কম্পিউটার নির্ভুল ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। কাজ করার জন্য কম্পিউটার মানুষের আবিস্কার করা সূত্র ও মানুষের দেয়া নির্দেশ ব্যবহার করে। তবে মানুষ যদি ভুল সূত্র ব্যবহার করে ও ভুল নির্দেশ দেয় তবে কম্পিউটার ভুল উত্তর তৈরি করে থাকে। এই দোষ কিন্তু কম্পিউটারের নয়। যে ব্যক্তি কম্পিউটারকে ভুলভাবে নির্দেশনা দেয় দোষটি মূলত তারই। ইংরেজিতে কম্পিউটারের ভুল ফলাফল দেয়াকে বলে গার্বেজ ইন গার্বেজ আউট (এধৎনধমব ওহ এধৎনধমব ঙঁঃ) বা জিগো (এওএঙ)।
৫) ক্লান্তিহীনতা (Diligence)
কম্পিউটার একটি যন্ত্র। আর যন্ত্রের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা। পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে বা সাধারন কোন নিয়মিত কাজে কম্পিউটার রাত দিন ক্লান্তিহীন, বিরক্তিহীন এবং বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে পারে। কম্পিউটারের কোন আবেগ নেই। তাই কাজ করতে তার মনোযোগ, সহিষ্ণুতায় ভাটা পরে না। শিল্পক্ষেত্রে কিংবা পর্যবেক্ষনমূলক কাজে এই কারনেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
৬) স্মৃতিশক্তি (Memory)
কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি আছে।একে ইংরেজিতে মেমোরি (গবসড়ৎু) বলে। প্রোগ্রামারগণ কম্পিউটার কি করে কাজ করবে তার নির্দেশ কম্পিউটারের স্মৃতিতে সংরক্ষন করে দেন। কাজ করার সময় এখান থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্দেশ তুলে নিয়ে কম্পিউটার কাজ করে। কম্পিউটার দিয়ে কাজ করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা কম্পিউটারের স্মৃতিতে সংরক্ষন করে রাখা হয়। প্রক্রিয়াজাত ডেটা ও ফলাফলও স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে। অপ্রয়োজনীয় তথ্য স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যায়।
৭) স্বয়ংক্রিয়তা (Automation)
কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এই কারনে ঝুকিপূর্ন কাজে মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কল-কারখানায়, বিস্ফোরক গবেষনায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। পূর্ব থেকে যেহেতু কম্পিউটারে নির্দেশ সংরক্ষন করে দেয়া থাকে তাই কাজ করার সময় একটির পর একটি নির্দেশের আলোকে স্বয়ংক্রিযভাবে কম্পিউটার কাজ করতে পারে।
৮) যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত (Logical Decision)
কম্পিউটারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থা বিচার করে কি কাজ করতে হবে তার আগাম নির্দেশ দিয়ে রাখলে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিভিন্ন কাজ নিজে নিজে করতে পারে। তবে নিজে থেকে কম্পিউটার কোন মৌলিক চিন্তাশক্তির অধিকারী নয়। মানুষের দেয়া উন্নত সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।
৯) ব্যবহারের বহুমুখিতা (Versatility)
বহুমুখী কাজে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায়। এর কারন হচ্ছে কম্পিউটার একাট প্রোগ্রাম নির্ভর যন্ত্র। যখন যেই প্রোগ্রাম কম্পিউটারে লোড করা থাকে সেই প্রোগ্রাম অনুসরণ করে কম্পিউটার কাজ করতে পারে। এই কারনে একটি কম্পিউটারে যেমন হিসাব-নিকাশের প্রোগ্রাম ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা যায় আবার মাল্টিমিডিয়া সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ছবি দেখা যায় বা গান শোনা যায়। এরকম বিবিধ কাজ কম্পিউটার করতে পারে।
১০) অসীম জীবনীশক্তি (Endless Life)
কম্পিউটার চালানো হয় প্রোগ্রাম ব্যবহার করে। প্রোগ্রাম তৈরি করেন প্রোগ্রামার ও বিজ্ঞানীগণ। মানুষের জীবনের যেমন একটি নির্দিষ্ট সময় আছে কিন্তু প্রোগ্রামের কোন নির্দিষ্ট জীবনসীমা নেই। মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম বছরের পর বছর সামান যোগ্যতায় একই মান এ কাজ করে যেতে পারে। হার্ডওয়্যারের একটি নির্দিষ্ট জীবনসীমা আছে। কিন্তু সফ্টওয়্যারের জীবন অসীম।